ফেসবুক আপনাকে সুখী হতে দিচ্ছে না! কারণগুলো জানলে অবাক হবেন

ফেসবুক আপনাকে সুখী হতে দিচ্ছে না! কারণগুলো জানলে অবাক হবেন

ফেসবুক কীভাবে আপনাকে অসুখী করে তুলছে, আপনাকে সুখী হতে দিচ্ছে না, জানেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক, বারবার মনে করিয়ে দেয়, "আপনার হয়তো ওই জায়গায় থাকা উচিত ছিল, তমুক কাজ করা উচিত ছিল, বা অমুকের মতো একজন সঙ্গী থাকা ভালো হতো।" এভাবে, আপনি নিজের মধ্যে সন্তুষ্টি খুঁজে পান না; বরং অন্যদের জীবনেই সুখ খুঁজতে থাকেন। ফলে আপনি যা আছেন বা যা পেয়েছেন, তাতেই সন্তুষ্ট হতে পারেন না। সহজভাবে বলতে গেলে, ফেসবুক আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে সুখী হতে দেয় না, বরং এক ধরণের মিথ্যা সুখের ফাঁদে ফেলে ক্রমাগত অখুশি করে তোলে

ফেসবুক আপনাকে সুখী হতে দিচ্ছে না! কারণগুলো জানলে অবাক হবেন

সময়ের অপচয় ও হতাশার চক্র

ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আসলে আমাদের সময় এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। অজান্তেই কয়েক মিনিটের জন্য স্ক্রল করতে গিয়ে কেটে যায় আধঘণ্টা বা তার বেশি। ফলে, আমরা যখন সময়ের অপচয় বুঝতে পারি, তখনই ভেতরে একটা খালি অনুভূতি চলে আসে। নিজেদের আসল কাজ থেকে পিছিয়ে পড়ার বোধ থেকে জন্ম নেয় হতাশা এবং উদ্বেগ।

আরও পড়ুনঃ ফেসবুক আসক্তি কমানোর ১০টি সহজ টিপস, কমিয়ে ফেলুন ফেসবুক আসক্তি!

মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব

কালের পরিক্রমায় ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কন্টেন্টের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতিরিক্ত ব্যবহার হতাশা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, এবং মানসিক চাপের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এমনকি, কিশোর-কিশোরীদের জন্য এটি আরও বেশি ক্ষতিকর।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ইয়ুথ রিস্ক সার্ভের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়ঃ
  • প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটানো কিশোর-কিশোরীদের বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা অনুভব করার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ।
  • ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৪৬ শতাংশই তাদের শরীর নিয়ে নেতিবাচক ধারণায় ভুগছে। আরও উল্লেখযোগ্য হলো, তাদের ৬৪ শতাংশ প্রায়ই বিদ্বেষপূর্ণ বা ঘৃণামূলক কন্টেন্টের মুখোমুখি হচ্ছে।
  • ৫০ শতাংশ টিনএজার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বের হতে কষ্ট অনুভব করে এবং ২২ শতাংশ এমনও রয়েছে, যারা আত্মহত্যা নিয়ে গভীর চিন্তা করেছে।

নিজের এবং সময়ের মূল্যহীন অনুভূতি

ইউনিভার্সিটি অব বাথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরত থাকলে সপ্তাহে গড়ে অন্তত ৯ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায়। এই সময়টাতে মানুষ নতুন কিছু শিখতে পারে, নিজের সৃজনশীলতা বাড়াতে পারে এবং মনকে বিশ্রাম দিতে পারে। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আটকে থাকা মনোজগতের জন্য একপ্রকার নিষ্ঠুর চক্র, যেখানে আমরা নিজেদের ভেতর একটা শূন্যতা অনুভব করি এবং সত্যিকারের সুখ বা আত্মতৃপ্তি আর খুঁজে পাই না।

মনোযোগ ও সম্পর্কের অবনতি

মানুষের মনোযোগ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমছে এবং সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলছে। একাধিক সম্পর্কের জটিলতায় জড়িয়ে পড়া, অনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক প্রতারণা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারে অনেকেই ভুগছে। এভাবে, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো বাস্তব জীবনের সম্পর্ক এবং বিশ্বাসের বন্ধনকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এতে করে মানুষ অনেকেই নিজের জায়গায় খুশি থাকতে পারে না, সবসময় নতুন কিছু খোঁজার চাপে থাকে।

FAQs

ফেসবুক কি মানুষের মনোযোগ কমিয়ে দেয়?

হ্যাঁ, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটালে মানুষের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

ফেসবুক ব্যবহারের ফলে কি বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়ে?

হ্যাঁ, অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এটি বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়ায়।

সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কীভাবে তৈরি হয়?

ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, এটি বারবার ব্যবহার করতে মন চায়, ফলে সহজেই আসক্তি তৈরি হয়।

ফেসবুক কি আমাদের জীবনের সন্তুষ্টি কমিয়ে দেয়?

গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকে অন্যদের জীবন দেখার কারণে নিজের জীবনের প্রতি অসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়, ফলে সুখের অনুভূতি কমে যায়।

কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া যায়?

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমানোর জন্য আপনি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে পারেন এবং কিছু সময়ের জন্য ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া কি মানসিক চাপের কারণ?

হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়া অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং হতাশা বাড়তে পারে।

মন্তব্যসমূহ