৪৮তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ পাবে তিন হাজার চিকিৎসক
৪৮তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নিয়োগ পাবে তিন হাজার চিকিৎসক
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেনা, এমন প্রায় কোনো শিক্ষিত যুবকই খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির জন্য ৪৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, যা লাখো স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীর জন্য নিয়ে এসেছে এক নতুন আশার আলো। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, এবার মোট ৩০০০ (তিন হাজার) শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে – যা গত কয়েক বছরের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ সুযোগ।
আবেদনের শেষ তারিখ: ৩০ জুন, ২০২৫আবেদন শুধুমাত্র অনলাইনে: বিপিএসসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
৪৮তম বিসিএসের সার সংক্ষেপ
শূন্য পদ সংখ্যা: ৩০০০ (সর্বশেষ গণনা অনুযায়ী)। এই সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য।
ক্যাডার বন্টন:
- সাধারণ ক্যাডার: প্রশাসন, পুলিশ, কর, বৈদেশিক বিষয়সহ ২৮টি ক্যাডারে পদ শূন্য। (প্রাথমিক হিসাব)।
- পেশাগত/প্রযুক্তিগত ক্যাডার: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশল, কৃষি, ফরেস্ট ইত্যাদি।
- বিশেষ ক্যাডার: আনসার, ডাক বিভাগ ইত্যাদি।
(নির্দিষ্ট ক্যাডারভিত্তিক পদসংখ্যা বিপিএসসির ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত তালিকা দেখুন)
আবেদন ফি: ৭১২ টাকা (বিকাশ/নগদ/মোবাইল ব্যাংকিং/কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনেই পরিশোধযোগ্য)।
আবেদনের সময়সীমা: ২৫ জুন, ২০২৫ (বাংলাদেশ সময় রাত ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত)।
আবেদন পদ্ধতি: শুধুমাত্র অনলাইন। www.bpsc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে।
কারা আবেদন করতে পারবেন? (যোগ্যতা)
জাতীয়তা: অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
বয়স:
- সাধারণ ক্যাডার: ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সর্বোচ্চ ৩০ বছর। (জেনারেল ক্যাটাগরির জন্য)।
- মুক্তিযোদ্ধা কোটার সন্তান/নাতি-নাতনি: সর্বোচ্চ ৩২ বছর।
- প্রতিবন্ধী ও জেলা কোটা: সর্বোচ্চ ৩২ বছর।
BCS (স্পেশাল) / পেশাগত ক্যাডারে কিছু পদে ভিন্ন বয়সসীমা প্রযোজ্য হতে পারে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
- সাধারণ ক্যাডার: যেকোনো বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) / স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বাংলাদেশের যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হতে হবে।
- পেশাগত/প্রযুক্তিগত ক্যাডার: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ধারিত ডিগ্রি (যেমন: এমবিবিএস, বিই/বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএড, কৃষিতে স্নাতক ইত্যাদি)।
- শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা: পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ডের কাছ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
আবেদন করার পদ্ধতি
প্রস্তুতি:
- স্ক্যান কপি প্রস্তুত করুন: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (৩০০x৩০০ পিক্সেল), স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)/জন্ম নিবন্ধন সনদ, সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের স্ক্যান। (সব ফাইল JPG/PNG ও সর্বোচ্চ ৩০০ KB)।
- মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা সক্রিয় আছে নিশ্চিত করুন।
অনলাইন আবেদন:
- বিপিএসসির ওয়েবসাইটে যান: www.bpsc.gov.bd
- "Online Application" বা "৪৮তম বিসিএস" লিংকে ক্লিক করুন।
- নির্দেশনা পড়ে "Apply Now" বাটনে ক্লিক করুন।
- প্রাথমিক তথ্য (নাম, এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল) দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করুন।
- লগইন করে বিস্তারিত ফর্ম পূরণ করুন (শিক্ষাগত যোগ্যতা, পিতামাতার তথ্য, পছন্দের ক্যাডার ইত্যাদি)।
ফি পরিশোধ:
ফর্ম সাবমিট করার পর নির্দেশিত পদ্ধতিতে (বিকাশ, নগদ, রকেট, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড) ৭১২ টাকা পরিশোধ করুন। পেমেন্টের Transaction ID (TrxID) অবশ্যই নোট করুন।
কনফার্মেশন ও প্রিন্টআউট:
পেমেন্ট সফল হলে, আবেদন কনফার্মেশন পেজ আসবে। এখান থেকে আবেদন ফর্মের প্রিন্টআউট (PDF) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। এটি ভবিষ্যতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
❗ সতর্কতা:
- আবেদনপত্রে ভুল তথ্য দেওয়া হলে বা জালিয়াতি ধরা পড়লে আবেদন বাতিল হবে।
- একজন প্রার্থী শুধুমাত্র একবারই আবেদন করতে পারবেন।
- আবেদনের শেষ মুহূর্তের ভিড় এড়িয়ে সময়মতো আবেদন সম্পন্ন করুন।
৪৮তম বিসিএস পরীক্ষার ধাপ ও প্যাটার্ন
বিসিএস পরীক্ষা তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়:
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা (বাধ্যতামূলক বাছাই পর্ব):
ধরন: বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)।
মোট নম্বর: ২০০।
সময়: ২ ঘণ্টা।
বিষয়:
- বাংলা (৩৫)
- ইংরেজি (৩৫)
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি (৩০)
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (২০)
- ভূগোল (১০), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (১০)
- সাধারণ বিজ্ঞান (১৫)
- কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি (১৫)
- গাণিতিক যুক্তি (১৫)
- মানসিক দক্ষতা (১৫)
পাসিং মার্ক: ক্যাডারভেদে পরিবর্তনশীল (সাধারণত মোট নম্বরের ৫০% এর কাছাকাছি)। এখানে উত্তীর্ণরাই শুধু লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
লিখিত পরীক্ষা (মূল ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ):
৯০০ নম্বরের এই পরীক্ষা দুটি ভাগে বিভক্ত:
ক. সাধারণ অংশ: (২০০ নম্বর)
- বাংলা (১০০) - রচনা, ব্যাকরণ, সাহিত্য।
- ইংরেজি (১০০) - Essay, Grammar, Composition, Translation।
খ. ঐচ্ছিক অংশ: (৭০০ নম্বর)
আপনার পছন্দের ৩টি বিষয় (মোট ৭০০ নম্বরের জন্য)। প্রতিটি বিষয়ে ২০০ নম্বর করে, তবে সেরা দুটি বিষয়ের ২০০+২০০=৪০০ এবং তৃতীয় বিষয়ের ১০০ নম্বর (মোট ৫০০) + সাধারণ অংশ ২০০ = মোট ৭০০। (গণনার পদ্ধতি ক্যাডারভেদে সামান্য ভিন্ন হতে পারে)।
লিখিত পরীক্ষায় ভালো স্কোরই চূড়ান্ত মেধাতালিকায় অবস্থান নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা):
- লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য।
- নম্বর: ২০০।
- সাধারণ জ্ঞান, ব্যক্তিত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, মনোভাব এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জ্ঞান মূল্যায়ন করা হয়।
- চূড়ান্ত মেধাতালিকা প্রস্তুত হয় লিখিত + মৌখিক পরীক্ষার সম্মিলিত নম্বরের ভিত্তিতে।
৪৮তম বিসিএসে সফল হওয়ার কার্যকরী টিপস
- সিলেবাস ডাউনলোড করুন: বিপিএসসির ওয়েবসাইট থেকে ৪৮তম বিসিএসের অফিসিয়াল সিলেবাস ও পরীক্ষার বিস্তারিত নির্দেশিকা ডাউনলোড করুন। এটাই আপনার বাইবেল।
- বেসিক শক্ত করুন: বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার (বিশেষ করে Translation, Preposition, Correction), গণিতের মৌলিক সূত্র ও অংক - প্রিলিমিনারির ভিত্তি।
- বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে জোর: মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, অর্থনীতি, ভূগোল, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, চলমান ঘটনাবলি। নিয়মিত পত্রিকা (প্রথম আলো, সমকাল, ডেইলি স্টার) ও মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন পড়ুন। (প্রাসঙ্গিক আর্টিকেল: প্রথম আলো)।
- নিয়মিত মক টেস্ট: প্রিলিমিনারির জন্য প্রতিদিন ১টি করে মক টেস্ট দিন। সময় ব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষণ করুন কোন টপিক থেকে বেশি ভুল হচ্ছে।
- লিখিত পরীক্ষার জন্য গভীর পড়াশোনা: শুধু গাইড বই নয়, কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের স্ট্যান্ডার্ড টেক্সট বই (বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য, ঐচ্ছিক বিষয়সমূহ) পড়ুন। রচনা ও Translation-এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন জরুরি।
- নোট তৈরি করুন: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, তারিখ, নাম, সংজ্ঞা নিজের ভাষায় সংক্ষেপে নোট করুন। শেষ মুহূর্তের রিভিশনের জন্য সহায়ক।
- সুস্থ থাকুন: পরীক্ষার প্রস্তুতি মানসিক ও শারীরিক চাপের। পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার ও হালকা ব্যায়াম রুটিনে রাখুন।
- সাইকোমেট্রিক টেস্ট ও ভাইভা প্রস্তুতি: লিখিত পরীক্ষার পরই মনোবৈজ্ঞানিক টেস্ট ও ভাইভার প্রস্তুতি শুরু করুন। আত্মবিশ্বাসী ও স্পষ্টভাবে কথা বলার অনুশীলন করুন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আপনার বিষয়ের হালনাগাদ সম্পর্কে জানুন। (রেফারেন্স: শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ)।
৪৮তম বিসিএস: প্রশ্ন ও জল্পনা
পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ কবে?
সাধারণত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩-৬ মাসের মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে বিপিএসসি চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করবে।
কোটা কেমন হবে?
স্বাধীনতা সংগ্রামী/মুক্তিযোদ্ধা কোটার সন্তান/নাতি-নাতনি, জেলা কোটা, নারী কোটা, উপজাতি কোটা ও প্রতিবন্ধী কোটা যথারীতি প্রযোজ্য হবে। কোটা নীতিমালা বিপিএসসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
